ডুয়েটে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে (২৮ নভেম্বর ২০২৪ খ্রি.) বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আরেফিন কাওসার। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) অধ্যাপক ড. উৎপল কুমার দাস। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গাজীপুরের প্রথম শহিদ শাকিল পারভেজ এর সম্মানিত পিতা জনাব মো. বেলায়েত হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহা. আবু তৈয়ব। অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক, হল প্রভোস্ট, অফিস প্রধানবৃন্দ সহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে যে জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে, তা ইতিহাসে বিরল উল্লেখ করে বলেন, ‘এই আন্দোলনে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ধনী-গরিব, কুলি-মজুর, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারÑ এক কথায় সকল পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছিল। যার ফলে এই আন্দোলনকে সফল করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিল সদ্য স্কুল পেরুনো কিশোরী কন্যা, ভার্সিটি পড়ুয়া টগবগে যুবক, ছয়-সাত বছরের নিষ্পাপ শিশু এবং খেটে খাওয়া আমার দিনমজুর ভাইটা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ।’
তিনি আরো বলেন, ‘জুলাই পরবর্তী এই দেশ পুনর্গঠনে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের বিপ্লব তখনই সার্থক হবে যখন বিপ্লবের আকাক্সক্ষা তথা বৈষম্যহীন একটা সমাজ আমরা গড়ে তুলতে পারবো। এজন্য প্রয়োজন দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক। আমি মনে করি, আমার সামনে বসে থাকা প্রতিটা শিক্ষার্থী সেই কাক্সিক্ষত যুবক, যারা এই দেশকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। এজন্য আমি তোমাদের অনুরোধ করবো, তোমরা তোমাদের মেধা ও যোগ্যতাকে আরো শাণিত করো।’
তিনি ‘আবু সাইদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ স্লোগানকে বুকে ধারণ করে ডুয়েটকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত এই তরুণ প্রজন্ম জুলাইয়ের এই স্পিরিটকে বুকে ধারণ করবে, কখনোই পথ হারাবে না বাংলাদেশ।’ তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গাজীপুরের প্রথম শহিদ, শহিদ শাকিল পারভেজের পিতা জনাব মো. বেলায়েত হোসেন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আরেফিন কাওসার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন জাতির সংগ্রামী ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উল্লেখ করে বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহিদ ও আহতদের আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীনতা ও ন্যায়ের পথে চলায় নতুন করে আলো জ্বালিয়েছে। এই গণআন্দোলন ও অভ্যুত্থান শুধু একটি অধ্যায় নয়; এটি ন্যায়বিচার ও সাম্যের ভিত্তি স্থাপনের এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এখন দেশের সর্বস্তরে সংস্কারকে বাস্তবমুখী করে একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে মনোনিবেশ করতে হবে। তবেই আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো এবং আমাদের প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সাম্যভিত্তিক এবং ন্যায়ের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।’
অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গাজীপুরের প্রথম শহিদ শাকিল পারভেজ এর সম্মানিত পিতা জনাব মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘শহিদ শাকিল পারভেজ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য প্রথম সারিতে থেকে সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতো। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে শহিদ শাকিল মানবসেবায় নিয়োজিত ছিল।’ তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জালিমশাহী, ফ্যাসিবাদী, স্বৈরশাসকদের পৈশাচিক খুনের বিচারের লক্ষ্যে অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন ডুয়েটের ১৯-সিরিজের ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাজাহান চৌধুরী ও সিই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল ইসলাম রানা এবং ডুয়েটের ২০-সিরিজের ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাসেল মিয়া, স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী মোহনা আক্তার ও এমএমই বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়েল রানা।
অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহা. আবু তৈয়ব বৈষম্যহীন ও বিভেদহীন বাংলাদেশ গড়ার আহŸান জানিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডুয়েটের আর্কিটেকচার বিভাগের প্রভাষক সুনিলা বিনতে আহসান ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক সাইফুল্লাহ্ মাহমুদ। পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সকালে ডুয়েটিয়ান ব্লাড ডোনেশন সোসাইটি আয়োজিত ও রিদম ব্লাড সেন্টারের কোলাবোরেশনে ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আরেফিন কাওসার। আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ), হল প্রভোস্টবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ এবং ডুয়েটিয়ান ব্লাড ডোনেশন সোসাইটির উপদেষ্টাবৃন্দ, সদস্যবৃন্দ, কনভেনর তাছনীম আলম সাঈদী ও সভাপতি মো. যোবায়ের হোসেন সহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।