জুলাইয়ের স্পিরিটের আলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে- ডুয়েট উপাচার্য
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এর মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে যে ঐতিহাসিক ও মহাকাব্যিক ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ সংঘটিত হয়েছিল, ইতিহাসে তা বিরল। এই গণঅভ্যুত্থানে সকল ভেদাভেদ ভুলে ছাত্র-জনতা যেভাবে এক কাতারে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক একইভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের আলোকে আগামীর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে হবে।’ আজ বুধবার (১৬ জুলাই) ঐতিহাসিক ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ শাকিল পারভেজ অডিটোরিয়ামে দুপুরে আয়োজিত এ আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আরেফিন কাওসার। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ-এর পুলিশ কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গাজীপুরের প্রথম শহিদ শাকিল পারভেজ এর সম্মানিত পিতা জনাব মো. বেলায়েত হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহা. আবু তৈয়ব। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) অধ্যাপক ড. উৎপল কুমার দাস এবং পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) দপ্তরের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে জুলাই হিরোদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
মাননীয় উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমরা জুলাইয়ের এই স্পিরিটকে বুকে ধারণ করলে কখনোই পথ হারাবে না বাংলাদেশ। মহাকাব্যিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান তখনই সার্থক হবে, যখন আমরা বৈষম্যহীন একটা সমাজ গড়ে তুলতে পারবো। তিনি জুলাইয়ের স্পিরিটকে বুকে ধারণ করে শিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রকাশনায় প্রাণপ্রিয় ডুয়েটকে বিশ্বমানে উন্নয়নের লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আরেফিন কাওসার জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে জাতির সংগ্রামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উল্লেখ করে বলেন, ‘এই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীনতা ও ন্যায়ের পথ চলার নতুন করে আলো জ্বালিয়েছে। এই অভ্যুত্থান শুধু একটি অধ্যায় নয়; এটি ন্যায়বিচার ও সাম্যের ভিত্তি স্থাপনের এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। আসুন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ি, যেখানে প্রযুক্তি ও নৈতিকতা হাত ধরাধরি করে হাঁটে। যেখানে একজন প্রকৌশলী হবে না কেবল একজন নির্মাতা, হবে একজন দায়িত্ববান দেশপ্রমিক নাগরিক।’
বিশেষ অতিথি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ-এর পুলিশ কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান একদিনের ফসল নয়। এটি দীর্ঘদিনের অনাচার, অন্যায়, অবিচার, গুম, খুন, লুটপাট, গণতন্ত্রহীনতা ও বাক-স্বাধীনতাহীনতার ফল।’ তিনি ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বুকে ধারণ করে একটি গণতন্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহŸান জানান।
অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গাজীপুরের প্রথম শহিদ শাকিল পারভেজ এর সম্মানিত পিতা জনাব মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘শহিদ শাকিল পারভেজ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য প্রথম সারিতে থেকে সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতো এবং মানবসেবায় নিয়োজিত ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবিলম্বে খুনিদের বিচারের হলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে।’
অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ডুয়েটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে সিই বিভাগের আফসানা আক্তার, টিই বিভাগের আতিয়ার রহমান, ইইই বিভাগের মো. আবদুল্লাহ এবং এমএমই বিভাগের শিক্ষার্থী তাছনীম আলম সাঈদী অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহা. আবু তৈয়ব বৈষম্যমুক্ত ও বিভেদহীন বাংলাদেশ গড়ার আহŸান জানিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এর আগে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সকালে ভিসি মহোদয়ের বাংলোর সম্মুখের দেয়ালে জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপর গ্রাফিতি উদ্বোধন করেন মাননীয় উপাচার্য। এ সময় মাননীয় উপ-উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে ডুয়েট মেডিকেল সেন্টার আয়োজিত এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বজনের বাস্তবায়নে ও রিদম বøাড সেন্টারের সহযোগিতায় রক্তদান কর্মসূচী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন একাডেমিক ভবনের সম্মুখে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান কর্ণার’ উদ্বোধন করেন মাননীয় উপাচার্য। এ সময় মাননীয় উপ-উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক, হল প্রভোস্ট, অফিস প্রধানবৃন্দ এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।