ডুয়েটে তিনদিন ব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স শুরু
তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক বিষয়ে অধিকতর গবেষণা ও উদ্ভাবনের বিষয়কে সামনে রেখে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এ International Conference on Advancement in Electrical and Electronic Engineering (ICAEEE 2024) বিষয়ক তিনদিন ব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স তৃতীয়বারের মতো আজ বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল থেকে শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার অডিটোরিয়ামে এই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এটা খুবই আনন্দের বিষয় যে, এই কনফারেন্সটি গবেষণা ও উদ্ভাবনের বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব গঠনে ও মানব কল্যাণে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া এটি সামগ্রিকভাবে, বৈদ্যুতিক এবং ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অগ্রগতি, জ্ঞান বিনিময়, সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনের জন্য একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে, যা একাডেমিয়া, শিল্প, সরকার, উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট স্টকহোল্ডারদের উপকারে আসবে।
তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার মাধ্যমে ক্রমাগত মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটছে। বিশেষ করে ন্যানোটেকনোলজি ও ন্যানোস্কেলে বিজ্ঞানের ব্যবহার, বৈদ্যুতিক এবং ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নতুন সম্ভাবনার জগত খুলে দিয়েছে। ন্যানো-প্রযুক্তি, ন্যানোস্কেল ট্রানজিস্টর থেকে কোয়াান্টাম কম্পিউটিং পর্যন্ত- কিভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ডিজাইন এবং তৈরি করা যায়, সেক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটছে। এ প্রযুক্তিসমূহ ব্যবহার করে স্বল্প সময়ে ও সহজে যে কোন কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া সেন্সর টেকনোলজির উৎকর্যতার মাধ্যমে সেন্সরগুলো ডিজিটাল যুগের চোখ এবং কান হয়ে উঠেছে, যা পরিবেশগত অবস্থা থেকে শিল্প প্রক্রিয়ায় পর্যন্ত সবকিছুর রিয়েল-টাইম ডেটা সরবরাহ করছে। সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নির্ভুলতার সাথে যে কোন তথ্য-উপাত্ত নিরীক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হচ্ছি এবং আরও দক্ষতার সাথে প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের ব্যবহারে সক্ষম হচ্ছি। রোবোটিক্স একসময় বিজ্ঞানের কল্পকাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তা আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। রোবোটিক্স টেকনোলজি বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রয়োগের মাধ্যমে গুনগত মান সম্পন্ন পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হচ্ছি। এছাড়া আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং জীবন-যাপন পদ্ধতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানবজাতির জীবন-যাপন, কাজ এবং একে অপরের সাথে সম্পর্কে ক্ষেত্রে আমরা একটি নতুন মাত্রা দেখতে পাচ্ছি। ফলে আগামী বিশ্বের অর্থনীতি এবং শিল্পসহ সকলক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উৎকর্ষতা সাধনের এই সময় বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষক, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, এই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক বিশিষ্ট আমন্ত্রিত বক্তা এবং গবেষকদের উপস্থাপনা এবং আলোচনা অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশে প্রকৌশল এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষাকে উন্নত করবে। এছাড়া এই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স থেকে অর্জিত গবেষণার ফলাফল ও প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবনের ধারণা মানবতার কল্যাণে ব্যবহৃত হবে এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। তিনি ১৫ আগস্টে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও তাঁদের পরিবারের শাহাদাত বরণকারী সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাসহ জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া তিনি তিনদিন ব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স আয়োজনের জন্য অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ডুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের উদ্যোগে এবং অত্র বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কনফারেন্সের অরগানাইজিং চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল কবিরের সভাপতিত্বে তিনদিন ব্যাপী এ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারস্ (আইইইই)-এর বাংলাদেশ সেকশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন ডুয়েটের ইইই বিভাগের অধ্যাপক ও কনফারেন্স চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. রাজু আহমেদ, ডুয়েটের ইইই বিভাগের অধ্যাপক ও কনফারেন্সের টেকনিক্যাল চেয়ার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাকির হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন ডুয়েটের ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. এস. এম. মাহফুজ আলম।
তিনদিন ব্যাপী এই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয়ে ১৯২ টিরও বেশি টেকনিক্যাল পেপার, ইনভাইটেড টক, কী নোট বক্তৃতা, ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিক কোলাবোরেশন ইত্যাদি উপস্থাপিত হবে। বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাম্প্রতিক উদ্ভাবন ও গবেষণা নিয়ে শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষক ও ডিসিশন মেকারদের মধ্যে মতবিনিময় এবং কর্মপন্থা নির্ণয়ই এ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সের উদ্দেশ্য। এ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সের টেকনিক্যাল কো-স্পন্সর ছিল আইইইই-এর বাংলাদেশ সেকশন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডুয়েটের ইইই বিভাগের অধ্যাপক ও কনফারেন্সের পাবলিকেশন চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. আরিফুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক, রেজিস্ট্রার (অ.দা.) এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ অংশগ্রহণ করেন।