ডুয়েটে দুইদিন ব্যাপী ‘সাসটেইনেবল ইঞ্জিনিয়ারিং ডেভেলপমেন্ট (আইসিএসইডি-২০২৩)’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স শুরু
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এ আজ মঙ্গলবার (১৩ জুন, ২০২৩ খ্রি.) দুইদিন ব্যাপী ‘সাসটেইনেবল ইঞ্জিনিয়ারিং ডেভেলপমেন্ট (আইসিএসইডি-২০২৩)’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স শুরু হয়েছে।
ডুয়েটের অধিকতর উন্নয়ন (১ম সংশোধনী) প্রকল্পের আয়োজনে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি এবং ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে এ কনফারেন্সের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমান। এ সময় তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে মানবজাতির জীবনযাপন, কাজ এবং একে অপরের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা একটি নতুন মাত্রা দেখতে পাচ্ছি। এর ফলে আগামী কয়েক বছর অর্থনীতি এবং শিল্পসহ সকলক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। এ প্রভাব মোকাবেলায় সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বিষয়টি খুব বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সে বিবেচনায় আজকের এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্মলেনে গবষেণার ক্ষত্রে হিসেবে পাঁচটি সম্ভাবনাময় বিষয়কে বিবেচনা করা হয়েছে। এগুলো হলো- কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়নমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি। আমি মনে করি, এই সম্মলেনের মাধ্যমে গবষেক, শক্ষিাবদি, বজ্ঞিানী, শল্পি-কারখানা উদ্যোক্তাগণ, প্রযুক্তি বশিষেজ্ঞ, নীত-িনর্ধিারক এবং দশে-বদিশেরে শিক্ষার্থীগণ একত্রতি হয়ে তাদরে জ্ঞান আহরণ, শেয়ার ও বকিাশ ঘটয়িে তাদরে নজি নজি ক্ষত্রেে অবদান রাখবে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা সকলেই জানেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে আমাদের বর্তমান সরকার বহুমাত্রিক গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তির সমৃদ্ধ যে সোনার বাংলা গড়ার পথ দেখিয়েছিলেন, সে পথ ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং একটি টেকসই সমাজ গঠনের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পাশাপাশি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং, এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়নমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভ‚মিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরণের আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং জ্ঞান বিনিময়ের প্লাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং রূপকল্প ২০৪১ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন এগিয়ে যাওয়ার কার্যকরী ভ‚মিকা এবং একাডেমিয়া, শিল্প উদ্যোক্তা, নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। তিনি আরো বলেন, আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক বিশিষ্ট আমন্ত্রিত বক্তা এবং গবেষকদের উপস্থাপনা এবং আলোচনা অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশে প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি শিক্ষাকে উন্নত করবে। এছাড়া তিনি দুইদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজনের জন্য অধিকতর উন্নয়ন (১ম সংশোধনী) প্রকল্প-এর অফিস, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এ সময় তিনি গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, ১৯৭১ সালে এই কিংবদন্তী মহান মানুষটির নেতৃত্বে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করেছে। তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আজ আমাদের সরকার সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি ১৯৫২ সালের সকল ভাষা শহীদ, ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও তাঁদের পরিবারের শাহাদাত বরণকারী সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাসহ জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানান।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ বলেন, টেকসই উন্নয়ন বর্তমান সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। উন্নত দেশ গড়ার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির সমন¦য় সাধন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে আমাদেরকে দেশ ও জাতি গঠনে কাজ করতে হবে। আমি মনে করি, এ কনফারেন্সে উত্থাপিত চিন্তা ভাবনাগুলো প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, টেকসই উন্নয়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষক, নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে মতবিনিময় ও কর্মপন্থা নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে।
ডুয়েটের অধিকতর উন্নয়ন (১ম সংশোধনী) শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. শওকত ওসমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন কনফারেন্স সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. নাঈম মো. লুৎফুল হক। কী নোট স্পিকার হিসেবে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রাইসুদ্দিন খান, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, দিল্লীর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. অতুল কুমার মিত্তাল, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেড-এর স্কুল অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষক ড. ক্রিস্টিয়ান বির্জার। মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাশেম, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আকরামুল আলম।
উল্লেখ্য যে, দুইদিন ব্যাপী এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয়ে ৫০ টিরও বেশি টেকনিক্যাল পেপার, কী-নোট স্পিচ, ইনভাইটেড স্পিচ ইত্যাদি বিষয় উপস্থাপিত হবে। বিশ্বব্যাপী টেকসই প্রকৌশল উন্নয়ন বিষয়ে সাম্প্রতিক উদ্ভাবন ও গবেষণা নিয়ে শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষক ও নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে মতবিনিময় এবং কর্মপন্থা নির্ধারণই এ কনফারেন্সের উদ্দেশ্য। এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠান আগামীকাল (১৪ জুন) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে।
এ আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের পাবলিকেশন পার্টনার ছিল ডুয়েট জার্নাল, এনার্জি অ্যান্ড থার্মোফ্লুইডস্ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং জার্নাল অব রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যান্ড টেকনোলজি। কনফারেন্স পার্টনার হিসেবে ছিল ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অমিত সূত্রধর ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহবুবা জান্নাত। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডীন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ অংশগ্রহণ করেন।