মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিক্ষার্থীদের সচেতন ও সক্রিয় হওয়া অপরিহার্য- ডুয়েট উপাচার্য
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এর মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেছেন, ‘মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিক্ষার্থীদের সচেতন ও সক্রিয় হওয়া অপরিহার্য। ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উপর যে অমানবিক নিপীড়ন, নির্যাতন, অবিচার, গুলি ও খুনের মতো ঘটনা ঘটেছে, তার ট্রমা এখনো তারা কাটিয়ে উঠতে পারে নি। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি দরকার মানসিক দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস এবং চাপ মোকাবিলার সক্ষমতা। এই আয়োজন সেই আত্মচর্চার দরজা খুলে দিবে। গত ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ শাকিল পারভেজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘‘ম্যানেজিং স্ট্রেস: প্র্যাকটিক্যাল স্ট্র্যাটেজিস ফর ডেইলি লাইফ অব ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস’’ শীর্ষক সচেতনতামূলক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারটি তিনটি ধাপে যথাক্রমে ১৭, ২৪ ও ৩১ জুলাই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় উপাচার্য আরও বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে ডুয়েট মেডিকেল সেন্টারে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চালুর মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আমি মনে করি, প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থী কীভাবে নিজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে এগিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে এটি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।’ তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জীবনের প্রতিটি অধ্যায়েই কিছু না কিছু চাপ থাকবে, কিন্তু সেই চাপকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করার কৌশল জানলে তা হয়ে উঠতে পারে নতুন অনুপ্রেরণার উৎস। এ ধরনের সচেতনতামূলক সেমিনার তোমাদের নিজেদের ভেতরের সক্ষমতা, সহনশীলতা এবং মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে পারে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আরেফিন কাওসার বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মকে শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান নয়, বরং বাস্তবজীবনের দক্ষতা অর্জনেও এগিয়ে যেতে হবে। আর মানসিক চাপ মোকাবিলার মতো বিষয়গুলো সেই দক্ষতার অন্যতম অংশ। তিনি শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ সঠিকভাবে মোকাবিলা করে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জীবন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে আরও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. নাজিম উদ্দীন, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. শরাফত হোসেন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, সায়েন্স অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. কামাল-আল-হাসান, পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) অধ্যাপক ড. উৎপল কুমার দাস এবং মেডিকেল সেন্টারের অফিস প্রধান ডা. রাবেয়া নাসরিন আখন্দ। সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন আইকিউএসি পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের মেডিকেল সেন্টারের ক্লিনিক্যাল কাউন্সেলর ও অভিজ্ঞ মনোবিজ্ঞানী সানজিদা আফরোজ। তিনি তাঁর বক্তব্যে মানসিক চাপের উৎস, প্রতিক্রিয়া এবং তা প্রতিদিনের জীবনযাপনে কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা করেন। তাঁর আলোচনায় উঠে আসে কীভাবে আত্ম-সচেতনতা, সময় ব্যবস্থাপনা, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। সেমিনারে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ বাস্তব অভিজ্ঞতা ও মানসিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন ।